#ফল ভরাপেটে নাকি খালি পেটে? প্রবাদ -ভরা পেটে ফল আর খালি পেটে জল । এটার ব্যাখ্যা কী?

পুষ্টিবিদ ডাঃ মো: ইকবাল হোসেন

উত্তর: সব মানুষের অবস্থা এক নয়। শারিরীক প্রয়োজনে আমাদের শরীর মনের ভাষা বুঝে খাবার খেতে হবে এটাই সঠিক। কিছু ফল খালি পেটে খাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর আবার অনেক ফল ভাল। প্রবাদ আছে: ভরা পেটে ফল আর খালি পেটে জল — এই প্রবাদটি নিয়ে বহু বিতর্ক অনেক আগে থেকেই । আসলে সকালে খালি পেটে যেমন জল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী তেমনি জল না খেয়ে ফল খেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতি। ঠিক তেমনি আবার খাওয়ার আগে অথবা খাওয়ার ১ঘন্টা থেকে অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি খাওয়া উচিৎ। এমনিভাবে ফলের ক্ষেত্রেও তাই কিছু ফল খালি পেটে খাওয়া উচিৎ নয় আবার অনেক ফল ভরাপেটে খাওয়া উচিৎ নয়। নিচের এবিষয়ে অতি সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হল —
সকালে নাস্তার পাশাপাশি ফল খেলে তা আমাদের শরীরের ভিটামিন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই অনেকেই সকালে নাস্তার তালিকায় ফলের জুস বা আস্ত ফল রাখেন। তবে, এমনও কিছু ফল আছে যা সকালে খালি পেটে খাওয়া উচিত না। অনেক সময়েই আমরা খালিপেটে এসব খাবার খাওয়ার পর থেকে নানারকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হই। কারণ, ফলে থাকা ফ্রুক্টোজ এবং বিভিন্ন অ্যাসিড থেকে এ ধরনের সমস্যায় প্রায়ই হয়ে থাকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক খালিপেটে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়।

সাইট্রাস ফল:
সাইট্রিক এসিডযুক্ত বিভিন্ন ফল যেমন- কমলা, লেবু, জাম, আঙ্গুর, জাম্বুরা প্রভৃতি খালিপেটে খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। তাই, পুষ্টিবিদেরা সকালে এসব ফল না খাওয়ার পরামর্শই দিয়ে থাকেন ।

চা ও কফি:
সকালে ঘুম থেকে উঠে চা-কফি না হলে যেন আমাদের সকালটা জমেই না। কিন্তু, এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে সে বিষয়ে অনেকেই সচেতন নয়। কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন যা পেটে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায় এবং হনমোনাল প্রক্রিয়াকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে। আর চায়ে রয়েছে উচ্চ মাত্রার অ্যাসিড যা খালি পেটে খেলে শরীরে গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের মতো রোগের সৃষ্টি করে।

নারকেল:
নারকেল কোরা দিয়ে মুড়ি খেতে দারুণ লাগে। সকালে নারকেল না খাওয়াই ভাল। সকালের দিকে নারকেল এবং নারকেল আছে এমন কোনও খাবার ভুলে খাবেন না। নারকেলের মতো উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত ফল সকালে না খাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

কলা:
সকালে কলা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কলা শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর হলেও জলখাবারে কলা না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। কারণ, কলায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অনেক বেশি। সকালবেলা কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে তা পেটের জন্য সমস্যার হতে পারে। তা ছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়ারও একটা আশঙ্কা থাকে।

তরমুজ:

বাড়িতে তরমুজ থাকলে মাঝেমাঝেই খেতে ইচ্ছা করে। দিনের অন্য সময় খেলেও সকালে জলখাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভাল। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই সময়ে তরমুজ খেলে যদিও শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। তবে খাবার খাওয়ার পর তরমুজ খেলে আবার খিদে পেয়ে যেতে পারে। কারণ তরমুজে জলের পরিমাণ অনেক বেশি। জল খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।

টমেটো ও শসা:

খালি পেটে টমেটো ও শসা খেলে কিন্তু শরীরে অনেক ক্ষতি হয়। কারণ টমেটো ও শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড যা খালি পেটে খাওয়ার ফলে অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করে।

ইস্ট যুক্ত খাবার:

ইস্ট যুক্ত খাবার যেমন- পেস্ট্রি বা প্যাটিস, কেক, পাউরুটি, রুটি, বিস্কিট ইত্যাদি খাবার খালি পেটে খেলে প্রচুর গ্যাস হয়, যা আলসারের মতো রোগের সৃষ্টির কারণ।

 

কোমল পানীয়:

কোল্ড ড্রিংকস এমনিতেই খুব একটা স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। খালিপেটে খেলে এর কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাকস্থলির মিউকাস মেমব্রেনে প্রভাব ফেলে। ফলে হজমের সমস্যার পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার হারও কমে যায়।

মিষ্টি জাতীয় খাবার:

মিঠাই, সন্দেশ, রসমালাই, গুড়, চিনি খালি পেটে খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আচার ও দই জাতীয় খাবার:

গাঁজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খাবার দই ও আচার খালি পেটে এসব খাবার খেলে শরীরের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাছাড়া দইয়ে বিদ্যমান ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। ফলে শরীরে অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

সারকথা : ফলের সঙ্গে যদি উচ্চমানের প্রোটিন খাওয়া হয় তবে শরীরে থাকা শর্করা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। ফলে এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। মুল খাবার খাওয়া ও ফল খাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে আধঘণ্টা ব্যবধান রাখতে হবে।

তাহলে ফল খাবেন কখন? সকালে এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর ফল খেতে পারেন। তবে সাইট্রাস জাতীয় কিছু ফল রয়েছে, যেমন- আঙ্গুর, কমলা, বাতাবীলেবু জাতীয় ফলগুলো খেলে অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে। আর অন্যান্য ফল যেমন- কলা, আপেল, নাশপাতি, জাম, বেদানা খালিপেটে খেলে শরীরের ভিতরের কার্যক্রমে সহায়তা করে। এগুলো শরীরে শক্তি জোগায়। সেই সঙ্গে ওজন কমতে সাহায্য করে।

এছাড়া সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং সন্ধ্যায় কিছু খাওয়ার আগে ফল খাওয়া উচিত, খাওয়ার পরে নয়। খাওয়ার অন্তত আধঘণ্টা আগে ফল খেলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছেটাই কেমন যেন কমে যায়। আর মূল খাবার খাওয়ার আগে ফল খেলে পাকস্থলীতে ক্যালরি কিছুটা কম জমা হয়।

আবার, খাওয়ার আগে ফল খেলে খাবারে বেশি ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়। ফল খেলে পেট তুলনামূলক ভরা লাগে এবং তা হজমেও সহায়তা করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফল না খাওয়াই ভালো।
#সুন্দর_পৃথিবীর_খোঁজে
#সুন্দর_পৃথিবীর_জন্য

জলখাবার অর্থ —

#হালকা খাবার;
#জলযোগ;
#নাশতা;
#নিয়মিত খাবারের চেয়ে কম #পরিমাণের খাবার।
#সকালের খাবার
#প্রাতরাশ
#snack
(ব্রেকফাস্ট বা সকালের নাস্তা অথবা জলখাবার হলো সকালের প্রথম খাবার, যা সাতসকালে সারাদিনের কাজ শুরুর আগে খাওয়া হয়। বেশিরভাগ মানুষই সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করে থাকেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর আগে ইংরেজিতে সকালের খাবার অর্থে ‘ব্রেকফাস্ট’ শব্দটির প্রচলন ছিলোনা। ব্রেকফাস্ট শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই রাতের খাবার বা ডিনারের পর ঘুম থেকে উঠে প্রথম খাদ্য গ্রহণ তথা উপবাস ভাঙাকেই বোঝায়; প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় জলখাবার বা ব্রেকফাস্ট এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ছিলো মরগেনমেট যার অর্থ ছিল “সকালের নাস্তা.”-wiki)

breakfast/সকালের খাবার/snack

Leave a Reply