এলার্জি, চুলকানি, চর্মরোগ সমাচার – এটার পিছনে কে বা কারা?
পৃথিবীর সবচেয়ে আদি রোগ হচ্ছে চর্মরোগ-এলার্জি,চুলকানি যা আমাদের বিকৃত জিনগুলো [Mutate Genes] প্রত্যেকের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ইমিউনিটি নষ্টের প্রথম যাত্রা শুরু এই এলার্জি ও চুলকানি। আবার এই এলার্জি চুলকানি বিভিন্ন ড্রাগস যেমন সালফার,জিংক ,ভেষজ- মলম-শ্যাম্পু, এন্টিফাংগাল,স্টেরয়েড,এন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি দিয়ে যখন বার বার দূর করা হয় তখন আমাদের অভ্যন্তর অংগের প্যাথলজিক্যাল (pathological) চেঞ্জ করতে থাকে বিশেষত আইবিএস,আলসার,এসিডিটি, কিডনী সমস্যা ,শ্বাসকষ্টের ,বিভিন্ন প্রকার বাতব্যথা , যৌনদুর্বলতা যা Chronic diseases/Non Communicable। মৃত্যু পর্যন্ত জ্বালাতনকারী সকল রোগের পিছনে মূল কারণ এই চর্মরোগসমূহ- চুলকানি-এলার্জি। এটার ঔষধ প্রজন্মের পর প্রজন্মে আমরা ব্যবহার করি একটু উপশমের জন্য কিন্তু বারবার ফিরে আসে। আর যখন ফিরে আসে না বা উপশম থাকে তখন ”উপরেবর্ণিত পেট,কিডনী, বাতব্যথা, যৌনদুর্বলতা ও ফুসফুসের রোগসমূহের এক বা একাধিক ” জন্ম দেয় । সাধারণ মানুষ তখন বলে আল্লাহ চর্মরোগের যন্ত্রণা থেকে আমাকে মাফ করেছে অথবা বলে ভাল হয়েছে। আর কোনো কোনো হতভাগার suppression না হয়ে palliation হয়।
[Suppression — an inhibition of a physiological phenomena or removal of a diseased manifestation before the disease itself is cured.
Palliation — Palliate means to reduce the violence of a disease or to ease symptoms without curing the underlying cause.]
ফলে চর্মোরোগ এলার্জি,চুলকানি থাকেই সাথে অভ্যন্তরীণ প্যাথলজিও গ্রো করে বিশেষত মানসিক রাগ, জিদ, বিরক্তি,দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তি। সুতরাং এলার্জি চুলকানির একমাত্র আরোগ্য ” জেনেটিক হোমিওপ্যাথি [Genetic Homeopathy] কিন্তু ধৈর্য্য ধরতে হবে বারবার নিয়মানুযায়ী বাড়বে কমবে। ইনশাআল্লাহ, প্রত্যেকেরই জেনেটিক চিকিৎসা নেওয়া কালে মাঝেমাধ্যে অবশ্যই চুলকানি এলার্জি দেখা দিবে এবং কিছুদিন পর চলে যাবে। কারণ ইতিমধ্যে বুঝেছেন–
- ১) এটা আদি রোগ যা আমাদের প্রত্যেকের জেনেটিক মিউটশনের জন্য দায়ী রয়েছে।
- ২) ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস,ফাংগাসহ যাবতীয় মাইক্রো অর্গানিজম শরীরে প্রবেশ মানেই সাময়িক এগুলো দেখা দেয়।
- ৩) ইমিউনিটির পক্ষে ক্ষতিকর বিভিন্ন এজেন্ট আমরা বর্তমান অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবদ্ধ।
এককথায় মিউটেট জিন যতক্ষণ আছে ততক্ষণ এলার্জি চুলকানি সৃষ্টিকারি কারণ যখন উপস্থিত হবে মাঝেমাঝে মিউটেট জিনগুলোকে কাজে লাগিয়ে ইমিউনিটির অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া আসবে। এটা জেনেটিক চিকিৎসার পর শরীর নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ঠিক করবে শুধু প্রয়োজন মনে হলে GMR খেতে হবে কয়েকদিন।
সারকথা– রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য মানুষের শরীরে রয়েছে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম। যখন শরীরে কোনো রোগ জীবাণু (যেমনঃ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, পরজীবী ইত্যাদি) প্রবেশ করে তখন ইমিউন সিস্টেম এন্টিবডি তৈরি করে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তবে কখনো কখনো ইমিউন সিস্টেম শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন উপাদানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এলার্জি বলা হয়। অর্থাৎ এলার্জি হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেম এর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জনিত একটি রোগ। যে বস্তু মানুষের শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করে তাকে এলার্জেন বলা হয়।
যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরে এলার্জি দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে—
- নির্দিষ্ট কিছু খাবারঃ বেগুন, পুঁইশাক, যব, ভুট্টা, ওট, ময়দা, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, বাদাম, ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।
- ধুলাবালি,
- খুশকি,
- গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া
- ঘাম
- গৃহপালিত পশু-পাখি /পোষাপ্রাণীর পশম
- পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু (Pollen)
- সূর্যরশ্মি
- ডাস্ট মাইট(ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকা যা মৃত কোষ ভক্ষণ করে থাকে)
- মোল্ড বা ছত্রাক
- মৌমাছি ও পোকামাকড়ের কামড়
- বিভিন্ন ঔষধ
- কীটনাশক শ্যাম্পু,
- কীটনাশক, হ্যান্ড গ্লাভস, বেলুন, প্রসাধনী, গহনা সামগ্রী
- ডিটার্জেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
- ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লাভস ও কনডম
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
- এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা
সচরাচর যেসব খাবারে এলার্জি হতে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে—
- চিংড়ি
- বেগুন
- ইলিশ মাছ
- গরুর মাংস
- বাদাম
- এ ছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে ডিম ও দুধেও এলার্জি হতে পারে।
একেকজন মানুষের একেক ধরনের জিনিস অথবা খাবারে এলার্জি থাকতে পারে। তাই কোন ধরনের জিনিসের সংস্পর্শে আসলে অথবা খাবার খেলে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সেই বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। এটি খুঁজে বের করতে পারলে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।
এলার্জির লক্ষণসমূহ
শরীর এলার্জিক উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এলার্জির লক্ষণগুলো হলো—
- চামড়ায় চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া
- শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া
- ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া
- চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া
- শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও নাক বন্ধ হওয়া
- শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
- বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া।
এলার্জি-চুলকানি প্রতিরোধ
এলার্জি থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব বস্তুতে এলার্জি রয়েছে সেগুলো এড়িয়ে চলা। এলার্জি প্রতিরোধে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—
- এলার্জি ঘটায় এমন খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।
- গৃহপালিত পশু-পাখির বাসস্থান বাড়ির বাইরে তৈরি করুন এবং তাদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ডাস্ট মাইট নামক এক প্রকার অতিক্ষুদ্র পোকা থেকে এলার্জি প্রতিরোধ করতে বাড়ির যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় কাটানো হয় সেগুলো ধুলামুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন। বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ ও লেপের কভার, জানালার পর্দা—এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যেসব জিনিস নিয়মিত ধোয়া যায় না সেগুলো বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। যেমন: কার্পেট।
- এ ছাড়া বিছানা গোছানো ও ঝাড়া-মোছা করার সময়ে ভালো একটা মাস্ক পড়ুন। যেসব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায় সেগুলো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছুন। এতে ধুলা ছড়াবে না।
- ছত্রাক বা মোল্ড থেকে সুরক্ষার জন্য বাড়ির পরিবেশ শুষ্ক রাখুন। পাশাপাশি বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা রাখুন। ঘরের ভেতর কাপড় শুকানো থেকে বিরত থাকুন এবং গাছ থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলুন।
- গরম বা ঘাম থেকে এলার্জি হতে পারে। তাই খুব পরিশ্রম করার পর শরীর গরম হলে বা ঘেমে গেলে বাতাস চলাচল করছে এমন স্থানে থাকুন এবং ঢিলেঢালা কাপড় পরুন।
- ঠান্ডা থেকেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এমন হলে বৃষ্টিতে ভেজা ও পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। গোসলের সময়ে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নির্দিষ্ট কিছু ধাতুতে কারোর এলার্জি থাকতে পারে। এসব ধাতুর তৈরি আংটি, গয়না ও ঘড়ি পরলে এলার্জি হতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ধাতুতে আপনার এলার্জি থাকলে দৈনন্দিন জীবনে সেই ধাতুর তৈরি জিনিস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- ফুলের পরাগ রেণুতে এলার্জি প্রতিরোধের জন্য ঋতু পরিবর্তনের সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকুন। বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টে গোসল করে ফেলুন, যেন পরাগ রেণু ধুয়ে চলে যায়। সম্ভব হলে ঘরের ভেতরে জামা-কাপড় শুকোতে দিন। তবে ছত্রাক যেন না জন্মে যায় সেই বিষয়েও খেয়াল রাখবেন। এ ছাড়া যে স্থানে ঘাসের পরিমাণ বেশি সেখানে হাঁটা-চলা করা থেকে বিরত থাকুন।
- বিভিন্ন প্রসাধনীতে থাকা কেমিক্যালে এলার্জি থাকতে পারে। যেমন: সাবান, শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ ও সুগন্ধিতে থাকা কেমিক্যাল। যেসব পণ্যে এলার্জি হয় সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- এলার্জি প্রতিরোধে বুকের দুধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর অন্তত প্রথম চার মাস শিশুকে কোনো শক্ত খাবার না দিয়ে কেবল বুকের দুধ খাওয়ালে সেটি এলার্জি প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
যেসব খাবারে সাধারণত এলার্জি হয় সেগুলো খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিয়ে দেখা হয় যে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে আসে কি না। পরবর্তীতে আবার খাবারগুলো খেতে শুরু করলে এলার্জি ফিরে আসে কি না তাও দেখার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত রোগী কোন ধরনের খাবার খাওয়ায় এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয় সেটি একটি ডায়েরিতে লিখে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে কোন কোন খাবারে রোগীর এলার্জি হয় তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
এলার্জির চিকিৎসা
আমাদের জেনেটিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি আরোগ্য [Cure] হবে ইনশাআল্লাহ।
সুন্দর পৃথিবীর খোঁজে, সুন্দর পৃথিবীর জন্য
Geneitc Homeopathy