যেটা প্রকৃতই সার্জারি যেমন জন্ম থেকে পায়খানার রাস্তা নেই অথবা হাত-পা নেই ইত্যাদি ক্ষেত্রে সার্জারিই একমাত্র উপায় আর সার্জারি সকল প্যাথিরই অংশ। তবে যেহেতু এগুলোর মূলে ক্ষতিকর জিনগুলো প্রকট থাকে তাই জেনেটিক হোমিওপ্যাথ ঔষধ দিবেন এবং একই সাথে অবশ্যই সার্জারি লাগবে জানাতে হবে।
এক্ষেত্রে অন্যপ্যাথিক ঔষধ একসাথে চলতে পারে অথবা শুধুমাত্র জেনেটিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দেওয়া যেতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত জেনেটিক হোমিওপ্যাথ নিজেই নিবে তাৎক্ষণিক বিচারে।
বিভিন্ন ইমার্জেন্সি অবস্থায় যেমন- কুকুর বিড়াল কামড়ানো, কেটে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে মেডিকেলের আইনে বাধ্যতামূলক যেই বিধান রয়েছে সেগুলো মেনে সরকারি হাসপাতালে ইমারজেন্সি বিভাগে পাঠাতে হবে।
যেমন- ভাঙ্গাচুরা রোগীকে অর্থোপেডিক্স এর কাছে পাঠাতে হয়। এবার রোগী এবং তার আত্মীয়রা যদি জেনেটিক হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন চালাতে আগ্রহী হয় তাহলে আমাদের ঔষধে একই সাথে অন্য প্যাথিসহ অথবা শুধুমাত্র আমাদের ঔষধই যথেষ্ট।
জেনেটিক হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্র ও সীমা
(The Scope and limitation of Genetic Homoeopathy)
“জেনেটিক হোমিওপ্যাথিতে সব রোগই আরোগ্য হয়”, বা “জেনেটিক হোমিওপ্যাথিতে কিছুই আরোগ্য হয় না”- এই দু’টি বিবৃতির কোনোটাই সত্য না। জেনেটিক হোমিওপ্যাথিতে অনেক রোগই আরোগ্য হয়। তবে সব রোগ সব অবস্থায় আরোগ্য হয় না- এটাই হ’লো অভিজ্ঞতা সত্য। জেনেটিক হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্র জানতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে জেনেটিক হোমিওপ্যাথি কি? জেনেটিক হোমিওপ্যাথি হলো জিন সদৃশ চিকিৎসা। কিসের সদৃশ্য তথাকথিত বিশেষ কোনো রোগের? না তা নয়।
- অর্গ্যানিক প্যাথলজি খুব বেশী বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে শুধু মাত্র ডাইনামিক (সুক্ষ্মশক্তি) ঔষধে তাকে ভাল করা সম্ভব নাও হতে পারে। বরং এ অবস্থায় শুধু মাত্র ডাইনামিক (সুক্ষ্মশক্তি) ঔষধ প্রয়োগে রোগীর আক্রান্ত দেহযন্ত্র সমূহের আরও বেশী ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার এবং রোগীর মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
- তাছাড়া যে সব রোগে ডাইনামিক স্তরে বৈকল্য ছাড়াই কোন গঠনগত পরিবর্তন দেখা দেয় সেখানে প্রাথমিক স্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- দুর্ঘটনা জনিত রক্তপাত, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, জলে ডুবে শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, বিষাক্ত দ্রব্য খাওয়া ইত্যাদি। লাঠি দিয়ে মেরে কেউ মাথা ফাটিয়ে দিলে শুধু মাত্র শক্তিকৃত ঔষধ ক্ষতস্থানের রক্ত বন্ধ করতে বা ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে ব্যর্থ হতে পারে? ছোরা দিয়ে আঘাত করার ফলে যকৃত ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা অস্ত্রে ছিদ্র হলে ঔষধ- কি করতে পারে? কিছুই না। অস্ত্রোপচার দ্বারা ক্ষতস্থান ঠিকমত সারিয়ে তোলার পর যন্ত্রণা কমানো, ভাল ঘুম হওয়া, দ্রুত আরোগ্য ইত্যাদির জন্য ঔষধ দেওয়া যাবে। নাইট্রিক অ্যাসিড শরীরের কোনো অংশে পড়লে পুড়ে যাবে। সুক্ষ্ম শক্তির ঔষধ এখানে নাইট্রিক অ্যাসিডের স্থুলক্রিয়া দূর নাও করতে পারে। সেইরূপ কেউ আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষ পান করে থাকলে সেই বিষের স্থুল বিষয় দিতে হবে এবং সেই বিষ যথাসম্ভব দ্রুত শরীর থেকে বের করে দিতে হবে। সুক্ষ্মশক্তির ঔষধ দিয়ে কিছু করা যাবে না।
- জেনেটিক হোমিওপ্যাথির প্রকৃত ক্ষেত্র সম্বন্ধে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরা হাস্যাস্পদ হবো না, অজ্ঞানতাবশতঃ মৃত্যুর কারণও হবো না আবার আরোগ্য যোগ্য ক্ষেত্রে আশু উপশমদায়ক ঔষধ প্রয়োগ করতে বা অসদৃশ চিকিৎসার স্মরণাপন্ন হতে বাধ্য হবো না। যে কোন বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ক্ষমতা সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণা থাকা উচিত। অন্যথায় যা আমার দ্বারা হওয়া সম্ভব নয়, তাই করার চেষ্টা করবো। অথচ, যা সম্ভব তা ঠিকমত করতে পারবো না ।
- আমাদের আরও জানতে হবে উপযুক্ত ক্ষেত্রেও কখন এবং কেন ঔষধ আরোগ্য করতে পারে না
- আমরা জানি, রোগের কারণ 2টি- যথাঃ ১) ধারক মূল কারণ (Fundamental) এবং ২) উত্তেজক (Exciting ) ও বাহক (Maintaining) । রোগী আরোগ্য হবে না, যদি না উত্তেজক এবং বাহক করণগুলি দূর করা হয়। যেমন, কোনো রোগী হয়ত অত্যধিক রাত্রি- জাগরণ, মদ্যপান প্রভৃতি করে। এই ভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তার অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, বদহজম বা ডিসপেপসিয়া, কোষ্টবদ্ধতা ইত্যাদি হতে পারে। এইগুলি থেকে উপশম পাওয়ার জন্য সে হয়ত নিয়মিত ঘুমের বড়ি, পার্গেটিভ ইত্যাদি ব্যবহার করে। এই রোগীর সঠিক ঔষধ ব্যবস্থা হল। হয়ত কয়েকদিন সে যথেষ্ট ফল পেল। কিন্তু রাত্রি জাগরণ, মদ্যপান প্রভৃতি উত্তেজক কারণ বর্তমান থাকলে বা সাময়িক উপশমের জন্য অসদৃশ চিকিৎসারূপ বাহক কারণ বর্তমান থাকলে আরোগ্য দুঃসাধ্য।
- দীর্ঘদিন প্রবল ক্ষমতাশালী অসদৃশ ঔষধ স্থূলমাত্রায় দিতে থাকলে অথবা শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ উপশম দেবার উদ্দেশ্যে অহেতুক বারবার প্রয়োগ করলে রোগীর শরীর অভ্যন্তরে একটা ঔষধজ রোগের সৃষ্টি হবে (Artificial or drug disease)। এ অবস্থায় আরোগ্য করা অনেক দুঃসাধ্য।
- কোনো রোগীর যদি একটি অতি মূল্যবান দেহযন্ত্র অস্ত্রোপচার দ্বারা অপসারণ করা হয়ে থাকে, তবে সেইসব রোগীকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করা অসম্ভব- শুধু উপশম দেওয়া যেতে পারে মাত্র। ইডিওসিনক্রেটিক (Idiosyncratic) রোগীদের যেকোন ঔষধই প্রতিক্রিয়া করে। কাজেই এদের আরোগ্য করতে অনেক কষ্ট ও ধৈর্য্য লাগে।
- দুর্ঘটনা, বিষক্রিয়া এবং প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার যোগ্য যে কোনো রোগীতেও প্রয়োজনবোধে অসদৃশ চিকিৎসার সাহায্য অবশ্যই নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে স্থূলমাত্রায় ঔষধ দিয়ে হৃৎপিন্ড, স্নায়ু ইত্যাদির কাজ বহাল রাখলে তবেই রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে ।
- প্রাথমিক পর্যায়ে ঔষধে আরোগ্যযোগ্য অনেক রোগও ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচারোপযোগী হয়ে উঠতে পারে। শুধুমাত্র ঔষধ রোগীকে বাঁচাতে পারবে না। যেমন, পেপটিক আলসারে ছিদ্রালতা। আলসারে ছিদ্র সৃষ্টির পর অস্ত্রোপচার না করলে রোগীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। ঠিক একই অবস্থা ঘটে অ্যাপেডিক্স ফেটে গেলে, কোনো যান্ত্রিক কারণে অস্ত্রের ধ্বংস দেখা দিলে এবং এই রকম আরও অনেক ক্ষেত্রে।
- যদি মায়ের পেলভিস শিশুর মাথার তুলনায় ছোট হয় (Cephalopelvic disproportion) এবং এ কারণে প্রসব না হয় সেখানে ঔষধে কিছুই না। তখন অস্ত্রোপচার অপরিহার্য।
- কোন গঠনগত কারণ না থাকলে বন্ধ্যাত্ব ঔষধে ভালভাবেই নিরাময় হয়। কিন্তু যদি ডিম্ববাহী নালী দুটিই বন্ধ থাকে বা জরায়ুর ফিক্সড রেট্রোভারশান বা পশ্চাদস্থিতি থাকে, তবে অস্ত্রোপচার অপরিহার্য। জরায়ুর স্থানচ্যুতিতে ঔষধের ভাল করে কিন্তু জরায়ু যদি সম্পূর্ণভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে (Complete Procedentia) তবে অস্ত্রোপচার অপরিহার্য।
- পিত্ত বা বৃক্কের পাথুরিতে অনেক ক্ষেত্রেই শুধু ঔষধে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু যদি পাথরগুলি খুব বড় আকারের হয়, অথবা পিত্তথলি নিষ্ক্রিয় (Non- Functionig gall Bladder) থাকে তবে ঔষধে আরোগ্য হওয়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অসম্ভব।
- দীর্ঘদিন ধরে কোন বিশেষ ঔষধ স্থূলমাত্রায় ব্যবহার করলে এমন একটা অভ্যাস (Drug habit) দাঁড়িয়ে যায় যে, সেই অভ্যাস ছাড়ানো কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমন হাঁপানীর আক্রমণ কমাবার জন্য কোনো অ্যান্টিস্প্যাসমোডিক, ঘুমের বড়ি, মধুমেহর জন্য ইনসুলিন, রক্তাচাপের জন্য কোনো প্রচলিত ঔষধ, বাতের জন্য কর্টিসোন জাতীয় ঔষধের ব্যবহার। এ সব ক্ষেত্রে হঠাৎ এইসব ঔষধ বন্ধ করে দিলে রোগীর মধ্যে অত্যন্ত তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়- এবং রোগীর পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব নাও হতে পারে। ধীরে ধীরে এইসব ঔষধ বন্ধ করা যায় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কোনোদিনই তা সম্ভব নাও হতে পারে।
- দেহধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তুর অভাবে যে সব রোগ দেখা দেয় সেখানে ঔষধের পাশাপাশি খাদ্য বিষয় প্রাধান্য । যেমন, অপুষ্টিজনিত রিকেট, স্কার্ভি, বেরি বেরি, রক্তহীনতা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে কোন রোগ নেই- শুধু পুষ্টির অভাবই এগুলির কারণ। কাজেই উপযুক্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার না দিলে শুধু ঔষধ সেই অভাবে পূরণ ক’রবে না।
- যদিও Genetic Homeopathy can cure only Curable Diseases, তবে এখানে একটা কথা মনে রাখা একান্ত দরকার। কোনটা আরোগ্যযোগ্য আর কোনটা নয় এটা সঠিকভাবে বলা এক প্রকার অসম্ভব । কারণ আজ যে রোগী আরোগ্য সম্ভাবনাহীন বলে মনে হচ্ছে কিছুদিন পরে হয়ত সে সেই দশা অতিক্রম করে আরোগ্যযোগ্য অবস্থায় আসতে পারে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমন অনেক রোগী দেখেছি। যেখানে প্র্যাকটিস অব মেডিসিন ও প্যাথলজির জ্ঞানবুদ্ধিমত রোগীকে আরোগ্য সম্ভাবনাহীন বলেই দৃঢ়ভাবে মত ব্যক্ত করেছি কিন্তু কিছুদিন পরে দেখেছি সেই রোগী ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করছে। কাজেই আপতদৃষ্টিতে আরোগ্যের সম্ভাবনা নেই মনে হলেই আরোগ্যের আশা ছেড়ে দিয়ে শুধু উপশম দেবার চেষ্টা করা উচিত নয়।
- তাই অনুরোধ করবো, অন্য চিকিৎসাসাস্ত্রে আরোগ্য সম্ভাবনাহীন বলে ঘোষিত হয়েছে বলেই কোনো রোগীর আরোগ্যের আশা একেবারে ত্যাগ না করে বরং ঔষধ ব্যবহার করে ঐসব আরোগ্য সম্ভাবনাহীন রোগীদের আরোগ্যযোগ্য অবস্থায় এনে আরোগ্য করতে পারেন কি না সেই চেষ্টা করে দেখুন। সীমাবদ্ধতার তালিকা দীর্ঘতর না করে ক্ষুদ্রতর করার চেষ্টায় ব্রতী হোন
[Genetic Homeopathy (book) – Dr.Md.Iqbal Hossen ও হোমিও সাথী – ডা: এস পি দে ষষ্ঠ সংস্করণ 2016 (সংক্ষেপিত)]